সকাল
৯টা না বাজতেই ভারতের রেকর্ড ভেঙে ফেলে বাংলাদেশ। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট
পর্যন্ত জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রবেশ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ।
এর
আগে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করে ভারত। গত বছরের ৬
মে একসঙ্গে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৫৩ ভারতীয় নাগরিক ‘জন গণ মন..’ গেয়ে গিনেজ
রেকর্ডে নাম লেখান।
সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের
মূল মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক জমায়েত হয়েছেন প্যারডে
গ্রাউন্ডে। ৯টা ১২ মিনিটে জমায়েত হন ১ লাখ ৮০ হাজার আর ৯টা ৫০ মিনিটে ঘোষণা
দেওয়া হয়, ২ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দশটায় ঘোষণা দেওয়া হয়, ২ লাখ ১৫
হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছেন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। সোয়া ১০টায় উপস্থিতি
ছিল ২ লাখ ২৭ হাজার জন। ১০টা ৪০ মিনিটে আড়াই লাখ মানুষের উপস্থিতির ঘোষণা
আসে মঞ্চ থেকে।
জাতীয় সংগীত শুরুর আগে আগে সোয়া ১১টায় ডিজিটাল কাউন্টিং মেশিনে উপস্থিতির সংখ্যা দেখানো হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন।
তবে সব মিলিয়ে বেলা ১১টার মধ্যে ৩ লাখ পূর্ণ হয় বলে নিশ্চিত করা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
২৬
মার্চ বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের পুরোনো রেকর্ড ভাঙে
বাংলাদেশ। এখন কেবলই গিনেজ বুকে নাম ওঠার অপেক্ষা।
বুধবার
সকাল সাড়ে ৬টায় খোলা হয় প্যারেড গ্রাউন্ডের প্রবেশদ্বার। স্বাধীনতা দিবসের
প্রথম প্রভাতে পায়ে পায়ে হাজারো মানুষ প্রবেশ করতে থাকেন প্যারেড
গ্রাউন্ডে। উদ্দেশ্য একটাই ‘জাতীয় সঙ্গীত গাইবো, বিশ্ব রেকর্ড গড়বো’।
প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আসতে থাকেন জনতা, পুরো প্যারেন্ড গ্রাউন্ড ছাপিয়ে আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে সুর ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।’
শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, গার্মেন্টস
শ্রমিক, পরিবহন সংশ্লিষ্টসহ সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেন। সশস্ত্র বাহিনীর
সহযোগিতায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ আয়োজন নিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে
সম্পন্ন হয় সব প্রস্তুতি।
প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে জাতীয় সঙ্গীতের
সঙ্গে দাঁড়িয়ে সুর মেলান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ
সদস্যসহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মুক্তিযুদ্ধের
বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই ‘লাখো কণ্ঠে
সোনার বাংলা’ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্য ছাপিয়ে গেছে, নতুন মাত্রা
পেয়েছে বিশ্ব রেকর্ডের খাতায় বাংলাদেশের নাম ওঠার মাধ্যমে।
এ রেকর্ড
গড়া সম্ভব হয়েছে এক মাঠে ৩ লাখ বাংলাদেশির প্রাণের জাতীয় সংগীত গাইবার
মধ্য দিয়ে। মাঠের ৩ লাখ মানুষের সঙ্গে সুর ধরেন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি
বাংলাদেশি।
বিভিন্ন
সাংস্কৃতিক আয়োজন, প্রয়োজনীয় মহড়া আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী
ঘোষণার পর ঘড়ির কাটায় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড
গ্রাউন্ডের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয়, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায়
ভালোবাসি...’। বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিদের প্রাণের এ সুর ছড়িয়ে পড়ে প্যারেড
গ্রাউন্ডের বাইরে, সারা বাংলাদেশে। পুরো পৃথিবীজুড়ে যেখানে যতো বাংলাদেশি
বাঙালি রয়েছেন তারাও কণ্ঠ মেলান লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া জাতীয় সংগীতে।
প্যারেড
গ্রাউন্ডে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন তিন লাখ বাংলাদেশি, বাইরে ছিলেন আরো কয়েক
লাখ আর দেশ-বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি। লাখো কণ্ঠের জায়গায় জাতীয় সংগীত তাই
ধ্বনিত হয়েছে কোটি কণ্ঠে। আর তা ছুঁয়ে গেছে প্রাণে প্রাণে। এ সুর হৃদয়ের
গভীরে ধারণ করে বাংলাদেশ উজ্জীবিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন
প্রেরণায়।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে ৪৪তম স্বাধীনতা
ও জাতীয় দিবসে বুধবার বাংলাদেশ উঠে গেছে নতুন এক মর্যাদার উচ্চ শিখরে।
বাঙালির দেশপ্রেমের অনন্য এক নজির দেখেছে বিশ্ব। পাশাপাশি লাখো কণ্ঠে জাতীয়
সংগীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করে বাংলাদেশের নাম উঠতে যাচ্ছে গিনেজ
রেকর্ডে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষা।
স্বাধীনতার
চিরভাস্বর স্মরণীয় দিন ২৬ মার্চের সকালে এভাবেই বিশ্ব দেখেছে এক জাতীয়
সংগীতই সকল মতাদর্শের মানুষকে কিভাবে একত্র করে ফেলেছে একস্থানেই। যে
সংগীতের সঙ্গে সুর উঠেছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া।
বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা সুর মেলান জাতীয় প্যারেড
গ্রাউন্ডে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ আয়োজনের সঙ্গে।
ক্ষণ গণনা শেষে
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের মূল মঞ্চে দেশবরেণ্য শিল্পীদের কণ্ঠে সুর ওঠে
‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’। পরম আবেগে এ প্রাণের এ সংগীতের
সঙ্গে সুর তোলেন পুরো গ্রাউন্ডজুড়ে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে থাকা
অংশগ্রহণকারীরা। একস্থানে ৩ লাখ কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের সুর অন্যরকম আবহ তৈরি
করে প্যারেড গ্রাউন্ডে।
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের উত্তর দিক থেকে আগত
অংশগ্রহণকারীরা এখনো মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বর দিয়ে এসে রোকেয়া সরণির
উত্তর প্রান্ত দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করেনন।
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের
পশ্চিম দিক থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা শ্যামলীর শিশুমেলার রাস্তা ও বঙ্গবন্ধু
আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের রাস্তা দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করেন।
জাতীয়
প্যারেড স্কয়ারের দক্ষিণ দিক থেকে আগত অংশগ্রহণকারীরা চন্দ্রিমা উদ্যানের
পাশের রাস্তা ও রোকেয়া সরণির দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে ভেন্যুতে আসেন।
জাতীয়
প্যারেড স্কয়ারের পূর্ব দিক থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা বিজয় সরণির পূর্ব
প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে সামরিক জাদুঘরের পাশের রাস্তা হয়ে বিজয় সরণির
দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করেন।
ছাত্র-ছাত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডের পেছন দিক থেকে প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢোকেন।
প্রতিটি
এলাকা থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সবাইকে গাইড করে নির্ধারিত প্রবেশপথ
দিয়ে নির্দিষ্ট সেক্টরে নিয়ে যান।